বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 2 minutes
নিজস্ব সংবাদাতা, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পদ্মা নদীতে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিখোঁজ এএসআই মুকুল হোসেনের (৪০) মরদেহ পাবনার সুজানগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সকালে উপজেলার নাজিরগঞ্জ ফেরীঘাট এলাকা থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ঘাট এলাকা থেকে আরেক এএসআই সদরুল হাসানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে নিখোঁজ দুই এএসআই এর মরদেহই উদ্ধার করা হলো।
ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, সকালে নাজিরগঞ্জ ফেরীঘাটে পদ্মা নদীতে এক ডিঙ্গি নৌকার মাঝি আমাদের ফোন করে মরদেহ ভেসে থাকার খবর দেয়। তারা মরদেহটি রশি দিয়ে ড্রেজারের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আমাদের কাছে থাকা কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানার পুলিশ নিখোঁজের তথ্য ও ছবি মিলিয়ে মরদেহটি এএসআই মুকুলের বলে শনাক্ত করা হয়। উল্লেখ্য কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে যাওয়া পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি সদস্যদের বহন করা নৌকা পদ্মা নদীতে ডুবিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দুই সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নিখোঁজের ৩৭ ঘন্টা ও ৪০ ঘন্টা পর ডুবুরিরা উদ্ধার করেছে। সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভোর ৪টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকায় দুবৃত্তদের হামলায় নৌকা থেকে নদীতে পড়ে যান এ ২ এএসআই।
নিখোঁজ পুলিশ সদস্যরা হলেন– স্থানীয় কুমারখালী থানা পুলিশের এএসআই সদরুল হাসান (৪৪) এবং মুকুল হোসেন (৩৭)। হামলায় আহত ব্যক্তিরা হলেন– স্থানীয় কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সানোয়ার হোসেন এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন আহত হয়েছেন। কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা নদীর ওপারে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি গ্রেফতার করার জন্য পুলিশের ছয় জন সদস্য নৌকায় করে যাচ্ছিলেন। ওখানকার লোকজনের সঙ্গে গতকাল দুর্বৃত্তদের মারামারি ও গণ্ডগোল হয়েছিল নদীতে। তারা মনে করেছে, তাদের প্রতিপক্ষের লোকজন আসছে। হঠাৎ করে এসে পুলিশের নৌকা ডুবিয়ে দেয়। নৌকাতে ছয় পুলিশ সদস্য এবং মাঝিসহ নিয়ে আরও তিন জন ছিলেন। নৌকা ডুবিয়ে দিলে পড়ে যাওয়ার সময় নৌকায় আঘাত লেগে একজন সাব ইন্সপেক্টর আহত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া দুজন ইউপি সদস্যকেও নাকি মারধর করা করেছে। তবে তারা তেমন গুরুতর আহত না। সবাই সাঁতরে তীরে উঠলেও দুই জন এএসআই এখনও নিখোঁজ রয়েছে।’ স্থানীয় কয়েক জন জানান, ভোররাত ৪টার দিকে একটি নৌকায় ইউপি সদস্য সানোয়ার ও আনোয়ার কুমারখালী থানার ছয় পুলিশ সদস্যকে নিয়ে পদ্মায় যান। এ সময় অবৈধভাবে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন জেলেরা। পুলিশের নৌকাটি জেলেদের দিকে এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নৌকায় থাকা এএসআই সদরুল হাসান ও এএসআই মুকুল হোসেন নদীতে ঝাঁপ দেন। তার পর থেকেই তারা নিখোঁজ।
এ বিষয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার এসএম ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘শিলাইদহ ইউনিয়নের কুঠিবাড়ি ঘাট এলাকার পদ্মা নদীতে পুলিশের দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকায় যায়। তবে খুলনা থেকে এখনও ডুবুরি দল না আসায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি। খুলনার ডুবুরি দল কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছে গেছে। তারা পৌঁছালে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘পদ্মায় একটি ঘটনায় কুমারখালী থানা পুলিশের দুজন এএসআই নিখোঁজ আছেন। তাদের উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল নৌকা নিয়ে পদ্মায় তল্লাশি চালাচ্ছে। অবশেষে নিখোজের ৪০ ঘন্টার মধ্যে ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে ডুবুরি দল।